জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১১.২৫ শতক জমির মালিকের নামে খারিজ থাকার পরেও অন্য ব্যক্তির নামে নামজারি (খারিজ) করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়াও তিনি জমি নামজারি ও খাজনার সরকারি নির্ধারিত ফি এর বাহিরে মোটা অংকের টাকা ছাড়া কাজ করেননা বলে অভিযোগ তুলেছেন অনেকেই। সেবা নিতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন সেবাগ্রহীতারা।পাশাপাশি জমির মালিকের নামে খারিজ থাকার পরেও একই জমি অন্য ব্যক্তির নামে কিভাবে খারিজ হলো এ বিষয়ে এসিল্যান্ডের সততা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উদয়পুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস আওতাধীন বিভিন্ন মৌজার বাসিন্দারা জিম্মি হয়ে আছে ভূমি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলামের কাছে। তিনি ওই ভূমি অফিসে যোগদান করার পর থেকে সেখানে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। নামজারী করার জন্য সরকারী ফি ১১’শ টাকা নির্ধারিত থাকলেও এর বাইরে তিনি নিজের মতো করে ফি নির্ধারণ করেন। তাছাড়াও খাজনার উপরে রয়েছে তার খবরদারি।
জানাযায়, কালাই উপজেলার পুনুট ইউনিয়নের ভূগোইল গ্রামের খায়রুল ইসলাম (আতিক)। তিনি উদয়পুর ইউনিয়নের মান্দাই মৌজার আওতায় মোসলেমগঞ্জ-পানিতলা রাস্তা সংলগ্ন ২২৭ নং খতিয়ানের ৬১৪ নং দাগে নামজারি (খারিজ) মূলে ১১.২৫ শতক জমি ক্রয় করেন। পরে আবার খায়রুল ইসলাম (আতিক) তার ক্রয়কৃত জমি খারিজ করেন। এর পর পুনরায় ওই দাগের সম্পত্তির ১১.২৫ অংশ ধরে ১২ শতক জমি আব্দুল আলিম নামের এক ব্যক্তিকে খারিজ করে দেন উদয়পুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম। বিষয়টি নিয়ে খায়রুল ইসলাম উদয়পুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলামের সাথে কথা বলতে গেলে উল্টো দুর্ব্যবহার করেন। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মান্দাই মৌজার ৬১৪ দাগের ১২ শতক জমির মালিক মাত্রাই ইউনিয়নের উলিপুর গ্রামের মৃত জয়মন বিবি। স্বামীসহ ৪ ছেলে ও ৪ মেয়ে ওয়ারিশ রেখে মারা যান জয়মন। পরে ওয়ারিশ মূলে স্বামী ও ছেলে আনিসুর রহমান ২০২২ সালের ৬ই ডিসেম্বর ৪.৫ শতাংশ জমি খারিজ করেন। সে খারিজ মূলে আনিছুরের কাছ থেকে খায়রুল ইসলাম জমিটি ক্রয় করেন। পরবর্তীতে আবার ৩ ছেলে ৩ মেয়ে ওয়ারিশ সূত্রে জালাল উদ্দীন সরকারের নামে ৬.৭৫ শতক জমি খারিজ করেন। এদিকে ০.৭৫ শতাংশের মালিক হলেও সর্বশেষ গত মে মাসে ওই দাগের জমি রেশমী নামের একজন কে ওয়ারিশ দেখিয়ে আঃ আলিমের নামে ১২ শতক জমি খারিজ হয়েছে। যা সম্পর্ন আইন বহির্ভূত ।
এ ব্যাপারে জমির মালিক ভুক্তভোগী খায়রুল ইসলাম (আতিক) বলেন, আমি খাজনা দিতে গিয়ে দেখি আমার জমি আব্দুল আলিমের নামে খারিজ করে দিয়েছে উদয়পুর ইউপি ভূমি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে তিনি আমার সাথে দুর্ব্যবহার করেন।
তিনি বলেন, অর্থের বিনিময়ে ওই ভূমি কর্মকর্তা ভূয়া খারিজ তৈরি করে দিয়ে আমাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। এখন আব্দুল আলিম অন্য পক্ষকে ভুয়া খারিজ দেখিয়ে সুমদয় ১২ শতক জমি বিক্র করতে অন্য পক্ষের কাছ থেকে বাইনাপত্রও নিয়েছেন৷ তিনি আরো বলেন, খারিজ সংশোধনের জন্য আমার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকাও দাবি করেন ভূমি কমকর্তা। এই জালিয়াতি ভূমি কর্মকর্তা আমার জমি আব্দুল আলিম কে খারিজ করে দেওয়ায় তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে সে আমার উপর চরাও হয়ে ওঠে। এমনকি সে আমাকে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়েছে। আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমার মত ভুক্তভোগী এবং অতিরিক্ত টাকা দিয়ে যাতে আর কাউকে কাজ করতে না হয় এ জন্য শহীদুল ইসলামের অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রশাসনকে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার ও অপসারণের জোর দাবি জানাচ্ছি।
ইউনিয়নের গ্রামতলা গ্রামের মাছুদ রানা বলেন, খারিজ করতে আসা প্রতেক ব্যক্তির নিকট থেকে ভূমি অফিসার অতিরিক্ত টাকা নেয়। তার কাছে আমাদের এলাকার লোকজন অসহায় হয়ে পড়েছে। আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তিনি প্রশাসনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
পার্শ্ববর্তী বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার গাংগইট গ্রামের লোকমান আলী সরদার বলেন, এর আগের উদয়পুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মামুনুর রশিদও আমাদের সাথে এ রকম একটা অন্যায় কাজ করেছেন। বাবা মৃত্যুর পর আমরা ১১ জন ওয়ারিশ থাকার পরও মরিয়ম নামের অন্য ব্যক্তিকে আমার বাবার স্ত্রী বানিয়ে দুইজন ওয়ারিশ দেখিয়ে জমি খারিজ করে দেন। আমরা এসিল্যান্ড অফিসে ধরনা ধরেও এর কোন সমাধান খুঁজে পাচ্ছি না।
এবিষয়ে উদয়পুর ইউনিয়ন ভূমি র্কমর্কতা শহীদুল ইসলাম দায় স্বীকার করে বলেন, ভূল হতে পারে তবে এর সাথে লেনদেনের কোন সম্পর্ক নেই। কিভাবে ভুল হয়েছে নথি দেখে জানাব। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, খায়রুল ইসলামকে খারিজ বাতিলের আবেদন করতে বলেন আমি ব্যবস্থা করে দিব।
এ বিষয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবুল হায়াত ' দৈনিক সকালের বাংলাদেশ কে বলেন, অভিযোগ পেলে যারা এর সাথে জরিত শক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। যে ভুক্তভোগী তাকে অবশ্যই এই কষ্টের জায়গা থেকে লাঘব করতে সহযোগিতা করবো ।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মাজহারুল ইসলাম || ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : বীর মুক্তিযোদ্ধা এস. এম. সরোয়ার জাহান ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মোঃ মনির হোসেন বিশ্বাস || সহ-সম্পাদক : মোঃ শাহাদাত হোসেন
সকালের বাংলাদেশ এর প্রিন্ট ও অনলাইন সংস্করণের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব দৈনিক সকালের বাংলাদেশ কর্তৃক সংরক্ষিত।You cannot copy content of this page