ঢাকার আশুলিয়ায় ১০ দফা দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১ টা থেকে নবীনগর-চন্দ্রা মহসড়কের পলাশবাড়ি এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন পিজিসিএল পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। দুপুর ১ টা ২০ মিনিট পর্যন্ত তারা মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। এঘটনায় নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের উভয়পাশে প্রায় ৬ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
জহির হোসেন নামের ব্যবসায়ী সাভার পরিবহনের যাত্রী বলেন, প্রায় প্রতিদিন সড়ক অবরোধ করছেন শ্রমিকরা। এতে করে সারাদিনই সড়কটিতে যানজট লেগেই থাকে। আমি ব্যবসায়িক কাজে প্রায় প্রতিদিন সাভার থেকে জিরানীবাজার যাই, প্রতিদিনই যানজটে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থাকতে হয়। বাধ্য হয়ে ধামরাই দিয়ে যাতায়াত শুরু করি। আজ সকালে পরিস্থিতি স্বাভাবিকের খবর পেয়ে এই সড়কটি দিয়ে রওনা করি। কিন্তু বেলা পৌনে ১২ টা থেকে প্রায় দেড়টা পর্যন্ত একই স্থানে বসে আছি। আমরা যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পরেছি।
শ্রমিকরা জানায়, কারখানার বিভিন্ন অনিয়ম সংস্কারের জন্য শ্রমিকরা ১০ দফা দাবি কতৃপক্ষের কাছে পেশ করেন। পরে আরও একটি দাবি যুক্ত করা হয়। এই দাবি সমূহ প্রাথমিকভাবে কারখানা কতৃপক্ষ মেনে না নিলে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। পরে তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেয় তারা। আজ পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কারখানা খোলা রাখার কথা ছিল। কিন্তু সকালে এসে শ্রমিকরা দেখেন কারখানা বন্ধ। পরে সকল শ্রমিকরা কারখানার সামনে জড়ো হয়ে সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে শ্রমিকরা।
দাবিগুলো হলো- হাজিরা বোনাস ১০০০, ৭ টার পর টিফিন বিল ৫০ টাকা এবং ১১ টার পর নাইট বিল ১০০ টাকা এবং নাইট বিল দিতে গিয় টিফিন বিল কর্তন করা যাবেনা, ৫ থেকে ৭ তারিখ বেতন দিতে হবে, ৬ মাসে ঈদ বোনাস দিতে হবে, ১ বছরে ছুটির টাকা দিতে হবে, বছরের ইনক্রিমেন্ট বছরে দিতে হবে, উৎসব ছুটি ১২ দিন দিতে হবে, ১৫ মিনিট লেট করলে হাজিরা বোনাজ কর্তন করা যাবেনা, এক বছরের ছুটির টাকা আটকানো থাকলে নগদ পেমেন্ট করতে হবে, লোক বের করে দেওয়া হলে ৩ মাস ১৩ দিনের বেতন দিতে হবে এবং ৫ বছর পূর্ণ হলে ফুল বেসিক সার্ভিস বিল দিতে হবে ও স্টাফদের হাজিরা বোনাস এবং ছুটির টাকা দিতে হবে।
পিজিসিএল’ কারখানার সিনিয়র অপারেটর ইলিয়াস বলেন, আমাদের ১০ টা দাবি ছিল। পরে আরও ১ টি দাবি সংযুক্ত করা হয়। গত বৃহস্পতিবার প্রশাসনসহ মালিকপক্ষ দাবি গুলো মেনে নিয়ে স্বাক্ষর করে গেছেন। তারপর কারখানা ১ সপ্তাহ বন্ধ রাখে কারখানা কতৃপক্ষ। তারা গতকাল মেসেজ দিয়েছে পূর্বের নিয়মে কারখানা খোলা থাকবে। এতে বোঝা যায় আমাদের কোন দাবি দাওয়া মেনে নেওয়া হয় নি। পরে গতকাল আমরা সড়ক অবরোধ করলে প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেই। আজ ১০ টার মধ্যে আমাদের দাবির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা ছিল। গতকাল বিজিএমইএ ঘোষণা করেছে সকল কারখানা খোলা থাকবে। কিন্তু আমরা কারখানায় এসে দেখি আমাদের কারখানা বন্ধ। আমরা আজ জানার জন্য এসেছি আজ কেন আমাদের কারখানা বন্ধ। দাবি মেনে না নেওয়ায় সকল শ্রমিক আবারও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন।
শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেন, গতকালের তুলনায় আজ পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে। অধিকাংশ কারখানার শ্রমিকরা সকালে কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে হাতে গোনা কয়েকটা কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করায় সেসব কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কতৃপক্ষ। কারখানার কার্যক্রম চালু রাখতে ও শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও শিল্পপুলিশ যৌথভাবে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এব্যাপারে পিজিসিএল পোশাক কারখানার মালিকপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাদের কাউকেই পাওয়া যায় নি।
You cannot copy content of this page