আমাগো হাসিনা নাই, তাই এবার কেউ নৌকা লইয়া এইহানে (এখানে) বাইচ দিতে আহে (আসে) নাই। সেই ছোটবেলা থেকে নৌকা বাইচ হইতে দেখছি। এবার বাইচ হইলো না। কোটালীপাড়ার কালিগঞ্জে ২শত বছরের নৌকা বাইচ না হওয়ায় এভাবেই আক্ষেপ করে বললেন উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের কুমরিয়া গ্রামের বৃদ্ধা মালতি বিশ্বাস।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সাথে সাথে বদলে গেছে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার রাজনৈতিক ও সামাজিক চিত্র। যেখানে প্রতিদিনই রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে এ উপজেলার রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের দিন কাঁটতো সেখানে এখন আর তাদের দেখা মিলছে না। অনুষ্ঠিত হচ্ছে না কোন প্রকার রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান।
উপজেলার ঘাঘর নদীর কালীগঞ্জ বাজার নামক স্থানে এমনই অবস্থার দেখা মিললো যেখানে প্রায় ২শত বছর ধরে বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষে নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কারণে ২শত বছরের পুরাতন ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচটি বন্ধ হয়ে গেছে বলে স্থানীয় জন সাধারণ জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলাবাড়ি গ্রামের একজন বাচারি নৌকার মালিক বলেন, এখানে নৌকা বাইচ মিলাতে কারো আয়োজন করতে হয়না। সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এখানে বাচারি নৌকা নিয়ে বাইচে অংশগ্রহণ করে। এ বছর আমাগো নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে না থাকায় আমরা নৌকা নিয়ে বাইচ দিতে আসি নাই। আমাগো নেত্রী দ্যাশে ফিরগা আইলে আবার আমরা এই নদীতে আনন্দের সাথে বাইচ দেবো।
গত বছর বিশ্বকর্মা পূজার দিনে শতাধিক বাচারি নৌকা এই বাইচে অংশগ্রহণ করেছিল উপজেলার ঘাঘর নদীতে। কিন্তু এ বছর মাত্র দুটি বাচারি নৌকার আগমন ঘটে। যে কারনে বন্ধ হয়ে যায় ২শত বছরের ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ। এই নৌকা বাইচ দেখার জন্য প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও কোটালীপাড়া উপজেলার আশপাশের কয়েকটি জেলা, উপজেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ এসেছিল। নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত না হওয়ায় তাদেরকে মনোক্ষুন্ন হয়ে ফিরে যেতে দেখা যায়।
নৌকা বাইচ দেখতে আসা বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সারহাট গ্রামের সুধির বাগচী (৬০) বলেন, আমি প্রায় ৪০ বছর ধরে এখানে বিশ্বকর্মা পূজার দিনে নৌকা বাইচ দেখতে আসি। এ বছরও নৌকা বাইচ দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু বাইচ না হওয়ায় ফিরে যাচ্ছি। আমরা চাই বাঙ্গালি জাতির ঐতিহ্যে লালিত ২শত বছরের এই নৌকা বাইচটি যেন এখানে অনুষ্ঠিত হয়।
কলাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এডভোকেট বিজন বিশ্বাস বলেন, প্রায় ২শত বছর ধরে এখানে নৌকা বাইচ হয়ে আসছে। এই বাইচের কোন আয়োজন নেই। দেওয়া হয়না কোন পুরস্কার। তারপরও মানুষ শত শত বাচারি নৌকা নিয়ে বিগত বছরগুলোতে এখানে বাইচে অংশগ্রহণ করেছে। এই বাইচ দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ এখানে উপস্থিত হতো। নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে এলাকায় মেলা বসতো। এলাকার প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে থাকতো উৎসবের আমেজ। কিন্তু এবছর কেন এরা নৌকা নিয়ে বাইচ দিতে আসেনি তাহা আমার জানা নেই।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মাজহারুল ইসলাম || ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : বীর মুক্তিযোদ্ধা এস. এম. সরোয়ার জাহান ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মোঃ মনির হোসেন বিশ্বাস || সহ-সম্পাদক : মোঃ শাহাদাত হোসেন
সকালের বাংলাদেশ এর প্রিন্ট ও অনলাইন সংস্করণের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব দৈনিক সকালের বাংলাদেশ কর্তৃক সংরক্ষিত।You cannot copy content of this page