টর্চার সেলে বন্দী করে এক মাদ্রাসা শিক্ষককে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত দেওয়া নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে বলে জানা যায়।
ভুক্তভোগী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান (২৫) ভান্ডারীকান্দি হাজেরিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত একজন জেনারেল শিক্ষক।
প্রতিষ্ঠানটি মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার ভান্ডারীকান্দি ইউনিয়নে অবস্থিত।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সকালে মাদ্রাসার মাওলানা হাবিবুর রহমান এর নির্দেশে মাওলানা বাকি বিল্লাহ, মাওলানা আব্দুল করিম, মুফতি মোঃ জামাল হোসেন মিলে শিক্ষক মোস্তাফিজকে মাদ্রাসার এক কক্ষে বন্দী করে মধ্যযুগীয় কায়দায় বৈদ্যুতিক তারের তৈরি চাবুক দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন।
নির্যাতন করেই তাদের কাজ সমাপ্ত হয়নি তাকে এক ঘন্টার মধ্যে ওই এলাকা থেকে বাসাবাড়ি নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য হুলিয়া জারি করা হয়। উপায়ান্তর না দেখে ভুক্তভোগী ৯৯৯ এ ফোন দিলে শিবচরের ভদ্রাসন পুলিশ ফাঁড়ি থেকে এএসআই জিয়াউল হক এর নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাঁকে বন্দী দশা থেকে মুক্ত করেন। পরে তাঁকে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।ভুক্তভোগী মোস্তাফিজ বলেন, মুহতামিমের পক্ষ থেকে তাঁর ওপর আনিত অভিযোগ সম্পুর্ন ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক। মাদ্রাসায় নিয়োগ প্রাপ্তির পর থেকেই মুহতামিম সাহেব তাঁকে এখান থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করে আসছে। ওই ঘটনার জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নেওয়ার জন্য তাঁকে একটা রুমের মধ্যে বন্দী করে নির্যাতন করা হয়েছে বলে আমদেরকে জানান। তিনি তাঁর ওপর নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা মাওলানা হাবিবুর রহমানের পদত্যাগ চেয়ে আমাদের উপস্থিতিতেই বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
টর্চার সেলে উপস্থিত ওই মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা নাজমুল হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন, মুহতামিম সাহেবের নির্দেশে নির্দিষ্ট ওই কক্ষে বন্দী করে প্রথমে মাওলানা বাকি বিল্লাহ সাহেব আঘাত শুরু করার পরে বাকি সবাই তাঁকে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। অনেক চেষ্টা করেও তাঁকে রক্ষা করতে পারেনি বলে জানান। পুলিশ এসে মুক্ত করার পর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।
অভিযুক্ত মাওলানা বাকি বিল্লাহর নিকট ঘটনার বর্ণনা জানতে চাইলে, তাঁর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ স্বীকার করে সম্পুর্ন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
মুহতামিম মাওলানা হাবিবুর রহমান এর নিকট তাঁর ওপর আনিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোস্তাফিজ এর কাছ থেকে হাজিরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্বীকারোক্তি নেওয়ার জন্য পাশের একটি কক্ষে জিজ্ঞসাবাদ করার জন্য কয়েকজন শিক্ষককে দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়। তখন তাঁরা তাঁকে বেত দিয়ে কয়েকটি আঘাত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন।
মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দাদন গৌড়ার নিকট জানতে চাইলে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটে গেছে। তদন্ত করে জানা গেছে,
বেশ কয়েকদিন যাবত (১৪ দিন) বিনা নোটিশে তিনি মাদ্রাসায় অনুপস্থিত ছিলেন। ওই ঘটনায় কোনো এক শিক্ষক তাঁর হাজিরা খাতায় সাক্ষরের স্থানে অনুপস্থিত দেওয়াকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে। সংবাদ পেয়ে মাদ্রাসায় উপস্থিত হয়ে সবাইকে শান্ত করে সালিশ সংস্থার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তর হোসেন বলেন, ৯৯৯ এ ফোন কল পেয়ে ভদ্রাসন ফাঁড়ি থেকে একটি টিম ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। তাঁরা ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। থানায় অভিযোগ দাখিল করা হলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
You cannot copy content of this page