সাভারের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায এক মানবিক আবেদন
সাভার, বাংলাদেশ – সাভারকে পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য রাখার নেপথ্যের কারিগর পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের ন্যায্য অধিকার ও সামাজিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই নীরব কর্মীদের কন্ঠস্বর হিসেবে ‘সুইপার জনকল্যাণ সংগঠন’-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, মোঃ সুলতান শেখ, সমাজের বিবেকবান নাগরিক ও প্রশাসনের কাছে এক মানবিক আবেদন জানিয়েছেন। তার আবেদনে ফুটে উঠেছে একদল পরিশ্রমী মানুষের বঞ্চনা, সামাজিক অবহেলা এবং তাদের সন্তানদের এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আকুতি।
মোঃ সুলতান শেখ, যিনি নিজেও একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী, তার আবেদনে বলেন, “আমরা, সাভারের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা, এই শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাই। আমাদের লক্ষ্য একটাই—সাভার উপজেলাবাসীকে একটি সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ উপহার দেওয়া।”
কিন্তু এই কঠোর পরিশ্রমের পরেও তাদের জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত করুণ। সমাজের চোখে তারা অবহেলিত এবং প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত। এই বঞ্চনার সবচেয়ে വേദനാদায়ক শিকার হয় তাদের সন্তানেরা। মোঃ সুলতান শেখের কথায়, “আমাদের সন্তানেরা তাদের প্রাপ্য মর্যাদা নিয়ে সমাজে বেড়ে উঠতে পারছে না। তাদের শুনতে হয় নানা ধরনের কটু কথা, বৈষম্যের শিকার হতে হয় খেলার মাঠ থেকে শিক্ষাপ্রাঙ্গণ পর্যন্ত।”
বাংলাদেশে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা প্রায়শই সামাজিক বৈষম্য এবং অবহেলার শিকার হন। তাদের স্বল্প বেতন, অনিশ্চিত জীবন এবং সামাজিক মর্যাদার অভাব তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের স্বাস্থ্য, আবাসন, চাকরি এবং শিক্ষাসহ বিভিন্ন অধিকার নিশ্চিত করার জন্য একটি জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা বিশেষজ্ঞরা তুলে ধরেছেন।
এই প্রেক্ষাপটে, সুইপার জনকল্যাণ সংগঠনের পক্ষ থেকে মোঃ সুলতান শেখ প্রশাসনের কাছে কিছু সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে প্রধান দাবিটি হলো সাভার উপজেলায় একটি স্থায়ী ‘সুইপার কলোনি’ স্থাপন করা, যা তাদের দীর্ঘদিনের আবাসন সমস্যার সমাধান করবে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বলছেন, একটি নির্দিষ্ট আশ্রয় তাদের জীবনে স্থিতি আনবে এবং সন্তানদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করবে।
আবেদনে আরও বলা হয়েছে, “আমরা কোনো করুণা চাই না, আমরা আমাদের অধিকার চাই। আমাদের সন্তানদের জন্য একটি বৈষম্যহীন পরিবেশ চাই, যেখানে তারা নিজেদের পরিচয় নিয়ে গর্বের সাথে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবে।” পর্যাপ্ত পারিশ্রমিকের অভাবে সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে দেওয়ার অক্ষমতা তাদের প্রতিনিয়ত পীড়া দেয়।
বিশেষ করে, নির্বাচনের সময় সাময়িকভাবে তাদের গুরুত্ব বাড়লেও নির্বাচন শেষ হওয়ার সাথে সাথেই তারা আবার বিস্মৃতির আড়ালে চলে যান বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এই মানবিক আবেদনটি সাভারের সুশীল সমাজ, সচেতন নাগরিক এবং প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের একটি প্রচেষ্টা। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জীবনে পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে বিশ্বাস করেন মোঃ সুলতান শেখ এবং তার সংগঠনের সদস্যরা। তাদের আশা, কর্তৃপক্ষ তাদের ন্যায্য দাবিগুলো সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করবে এবং তাদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসবে।
You cannot copy content of this page