
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ মেহেদী হাসানকে ঘিরে একটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত মহলের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
সম্প্রতি স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমে “ঘুষ ও অনিয়মের অভিযোগ” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যেখানে দাবি করা হয়, এক শিক্ষককে জমি বুঝিয়ে দেওয়ার নামে ভূমি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান ৮০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। অভিযোগকারী হলেন লিয়াকত হোসেন, জাজিরা উপজেলার মোহর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
তবে অভিযোগের পেছনে যে ব্যক্তিগত স্বার্থ এবং পূর্বপরিকল্পিত জালিয়াতি রয়েছে, তা একাধিক সূত্র ও তদন্তে উঠে এসেছে।
আদালতের রায়ের বিকৃতি, নামজারিতে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে
জানা গেছে, শিক্ষক লিয়াকত হোসেন কিছুদিন আগে একটি নামজারির আবেদন নিয়ে ভূমি অফিসে আসেন। সেখানে জমি মালিকানা প্রমাণে তিনি যে আদালতের রায়ের কপি দাখিল করেন, তাতে মূলত ৩ শতাংশ জমির রায় ছিল, কিন্তু তিনি নিজের হাতে তা কেটে ৩৭ শতাংশ লিখে জমা দেন। বিষয়টি সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসানের নজরে এলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে নামজারি প্রক্রিয়া স্থগিত করেন।
নামজারি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষক লিয়াকত হোসেন ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়ভাবে জমি দখলের চেষ্টা ও প্রভাব বিস্তার
প্রশাসনিক সূত্র ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, লিয়াকত হোসেন এরপর নিজ বংশের ১০-১২জন আত্মীয়কে এলাকায় ছাড়া করে নিজেই প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। স্থানীয় এক মালিকের কাছ থেকে জমি কিনে অন্য পক্ষকে উচ্ছেদ করার জন্য তিনি চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। এতে এলাকার সাধারণ মানুষ তার কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। তবে তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে তিনি দমনমূলক আচরণ করেন এবং কাউকে তোয়াক্কা করেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
জাজিরা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ মেহেদী হাসান বলেন,
আমি সরকারি নিয়ম মেনেই কাজ করেছি। আদালতের রায়ের কপি বিকৃত করে জমির পরিমাণ বাড়িয়ে নামজারি করানোর চেষ্টা তিনি করেছেন, যা আমি সঙ্গে সঙ্গেই প্রত্যাখ্যান করেছি। এখন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ছড়ানো হচ্ছে।”
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম বলেন,
বিষয়টি তদন্তাধীন। যদি দেখা যায় কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সরকারি কর্মকর্তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে চাইছে, তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে প্রকৃত অনিয়ম থাকলেও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে।
স্থানীয়দের মতে, লিয়াকত হোসেন এলাকায় বহুদিন ধরেই বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন,
ভূমি অফিস নিয়ম মেনে কাজ করছে বলেই উনি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। তিনি কাগজপত্র বিকৃতি করে সুবিধা নিতে ব্যর্থ হয়ে এখন প্রশাসনের লোকদেরই দোষারোপ করছেন।
উপজেলা ভূমি অফিস একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। সেখানে যদি অনিয়ম হয়, তা তদন্তযোগ্য। তবে সরকারি কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হয়রানি বা সামাজিকভাবে হেয় করার চেষ্টা হলে সেটি রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী। জাজিরার এই ঘটনাটি শুধু একটি ব্যক্তির অভিযোগ নয়, বরং প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও সৎ কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা রক্ষার একটি পরীক্ষা। এখন দেখার বিষয়, তদন্তে প্রকৃত সত্য কী উঠে আসে।